শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন: জোর করে বাল্যবিয়ে দেয়া ও নির্যাতনের অভিযোগে পিতা-মাতা ও আত্নীয় স্বজনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার কুঞ্জের হাট ইয়াছিনপাড়া ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বষের ছাত্রী স্বর্ণা রাণী দে।
বৃহষ্পতিবার (১০ মার্চ ) বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটি (বিআরইউ) এর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করে অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্বর্ণা রাণী দে বলেন, প্রতিবেশী অলোক নন্দন এর সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানা জানি হলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় বিশ্বনাথ এবং জীবন ধর নামের দুজন আমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে স্থানীয় কুঞ্জেরহাট হিন্দু যুব সংগঠনের সদস্য তপু, প্রসেঞ্জিৎ এবং চাতক আমাদের বিয়ের জন্য অলোকের কাছে নগদ ২০ লাখ টাকা এবং পাঁচ বিঘা জমি পন হিসেবে দাবি করে। এতে সম্মতি প্রকাশ করেন আমার বাবা সুশান্ত চন্দ্র দে এবং মা মনি রাণী দে।
অলোক এবং তার পরিবার তাদের এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে ১৫ দিনের সময় চেয়ে নেয়। এই ঘটনার দুই মাস পরে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একই গ্রামের দুলাল মাতুব্বরের ছেলে আনুমানিক ৫০ বছর বয়সি রাজিব মাতব্বরের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের রাতেই আমার সাথে রাজিব এবং তার পরিবারের ঝগড়া হয়। এরপর বিয়ের পর দিন সকালে আমি রাজিবের বাড়ি থেকে আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি।
কিন্তু বাবা-মা, বড়ভাই কর্ণচন্দ্র দে এবং পিসি সীমা রাণী দে আমাকে ঘরে না তুলে জোর জবস্তি আমার সাবেক প্রেমিক অলোকের বাড়িতে দিয়ে আসে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। শুধু তাই নয়, আমার পিসি এবং বড়ভাই আমাকে অলোকের বাড়িতে বসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অলোককে ফাঁসাতে বলেন।
এমন পরিস্থিতিতে আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চাই। তখন সেখান থেকে আমাকে থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হতে বলা হয়। আমি থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা থানার কর্মকর্তাদের অবগত করি।
পরে বাবা মা আমাকে দিয়ে জোরপূর্বক অলোকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করায়। থানায় দুই পরিবারের উপস্থিতিতে অলোক বিয়ের প্রস্তাব দিলে তাতে আমার মা রাজি না হয়ে উল্টো ২০ লাখ টাকা এবং পাঁচ করা জমি দাবি করে। পরে অলোককে তার দুই ভাই আদালত থেকে জেলে থেকে বের করেন। তাছাড়া আমার মা-বাবা আমাকে আদালতের মাধ্যমে সেফ কাস্টরিতে পাঠান।
লিখিত বক্তব্যেতে আরো বলেন, অলোক জামিনে বের হওয়ার পরে আবার আমার বাবা-মা অলোক এবং আমাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ অলোকের কাছে যাওয়ার জন্য আমাকে আমার বাবা-মা নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এমনকি আমাকে এবং আমার ছোট বোন শ্রাবন্তী রাণী দে কে টানা পাঁচ দিন বাইরে রাখেন। পরে আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে গ্রামে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করি।
তাছাড়া নির্যাতনের ঘটনায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আমি বাদী হয়ে তাদের হয়রানি থেকে বাঁচতে বাবা-মা এবং হিন্দু সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আসামি করে মোকাম ভোলা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। আমি মামলা করেও তাদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। উল্টো ছোট বোনকে অপহরণের অভিযোগ তুলে আমার এবং অলোকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলার হুমকি দিচ্ছেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, প্রশাসন যাতে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আমাদের হয়রানি থেকে রক্ষার পাশাপাশি অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবসা করেন তার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বর্ণা রাণী দের ছোট বোন শ্রাবন্তী রাণী দে।